"যুবসমাজের প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা বেকারসমস্যা ''
বর্তমানে বেকারসমস্যা নিঃসন্দেহে ভারতের প্রধানসমস্যার একটি অন্যতম সমস্যা l পুরাতন ব্যাধির মতো এই সমস্যার পশ্চাতে থাকে বুভুক্ষু ও নৈরাশ্য পীড়িত অগণিত নরনারী l সুস্থবিকাশের জন্মগত অধিকার হারিয়ে তারা ভাবতে শুরু করে এই হৃদয়হীন সমাজে তথা দেশে জন্ম নেওয়াটাই অপরাধ হয়েছে l আসলে এই সমস্যার সুত্রপাত ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের করুন পরিহাস l সৃজনশীল যে কর্মশক্তি নব নব প্রেরণায় মেতে উঠতে পারত, কর্মহীনতার অভিশাপে আজ তা অবক্ষয়ের শোচনীয় পরিনামে ক্লান্ত-অবসন্ন ও দিশেহারা l বেকার সমস্যা আরও নিত্যনতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে ;তাই এই সমস্যা দুরিকৃত করা একান্ত প্রয়োজন l কারন এখানেই লুকিয়ে আছে দেশের শক্তি তথা রাজ্যের শক্তি ও ভবিষ্যৎ যুবসমাজ l
#বেকার সমস্যা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে ব্রিটিশরাজ কতৃক প্রচলিত বহুল পদ্ধতি, যে গুলি একত্রে দায়ী l মুঘল আমলে ভারতের সুখ্যাতির কথা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিলো l এমনকি ভারতের কুটির শিল্পও বিখ্যাত ছিল l কোনও একজন সাহিত্যিক দুঃখের সঙ্গে বলেছেন -যে কোন ভদ্র ঘরের ইংরেজদের জানালার পর্দা থেকে আরম্ভকরে পকেটের রুমাল পর্যন্ত যা কিছু কাপড়ের জিনিস তা সবই ভারতের তৈরী করা l এমনকি বিশ্বের সকল দেশের বাজারে যে রেশমিবস্ত্র বিক্রি হতো,তাও অধিকাংশ আমাদেরদেশ থেকেই আমদানি হতো l ভারতে তাঁতের কাজে নিযুক্ত ছিল হাজার হাজার তাঁতি l যাইহোক ব্রিটিশ অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসে তাঁতের শিল্প বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছিল l তুলোর দাম তিনগুন বৃদ্ধি করে ভারতের কাপড়ের দাম কমিয়ে দিয়ে বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল এই শিল্পকে l মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেদিন তাঁতশিল্প সম্পর্কিত শিল্পীদের ভবিষ্যত l
বেকারত্ব সৃষ্টির দ্বিতীয় কারন হলো তাঁদের শিক্ষাপদ্ধতি l শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক আত্মিক বিকাশসাধন l শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করতে শেখানো l কিন্তু ইংরেজরা ভারতে যে ঔপনিবেশিক শিক্ষা প্রচলিত করেছিলো,তার উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যশাসন ও বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ইংরাজি জানা দেশি কর্মচারি তৈরী করা l
## বর্তমান যুগ প্রতিযোগীতার যুগ l এখন সরকারি চাকুরী হলো অমৃত তুল্য l এখন ডক্টরেট করা যুবক যুবতীরা পর্যন্ত চাকুরীর খোঁজে দিকভ্রান্ত ;এর থেকে কম শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কথা বলার নেই l এর সঙ্গে আবার অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাইভেট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল রকম কর্মীছাটাই l ভালো ভালো ইঞ্জিনিয়াররা পর্যন্ত দিশেহারা l বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শ্রমিক এর স্থানদখল করেছে যন্ত্র l
এমতাবস্তায় বহু শ্রমিককে চাষাবাদের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় l কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশে চাষযোগ্য ভূমির সংকট l তাই বিভিন্ন কারণে শিক্ষিত যুবক যুবতীরা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এবং ইঞ্জিনিয়ারদের করতে হয় মিস্ত্রির কাজ l অবশ্যই স্বীকার করতে হয় বেকারসমস্যার অর্থ হলো দেশের বিপুলসম্ভাবনার অপমৃত্যু l মানবশক্তি সমাজের সম্পদবৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত হতে পারতো কিন্তু এই শক্তির অপব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে l ফলস্বরূপ যুবসমাজের দিকে দিকে বিক্ষোভ এবং বিপ্লবের আগুন ;এবং বিভিন্ন অপরাধ জগতে পদার্পন অথবা আত্মহনন l
### সবশেষে বলতে হয় এই সমস্যা পৃথিবীর সব দেশেই আছে ;কিন্তু ভারতের বেকার সংখ্যা এতোবেশি যে সরকারের একক প্রচেষ্টায় একে রোধ করা সম্ভব নয় l তাই জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গঠন করে দেশের মধ্যে জাগাতে হবে কর্মতৎপরতার শঙ্খরব l সকল সমস্যার সমাধান আছে, বর্তমান যুবকদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে l শুরু করতে হবে স্থানের চাহিদা অনুযায়ী ছোটোখাটো ব্যবসা l খুলতে হবে বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম l এইভাবেই ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘোচাতে হবে আমাদের দেশের তথা রাজ্যের বেকারসমস্যা l