যুবসমাজের প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা বেকারসমস্যা

You can read amazing articles for any one who wants to know more

Avatar by Bhavans 25 Nov, 2022

"যুবসমাজের প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা বেকারসমস্যা ''

বর্তমানে বেকারসমস্যা নিঃসন্দেহে ভারতের প্রধানসমস্যার একটি অন্যতম সমস্যা l পুরাতন ব্যাধির মতো এই সমস্যার পশ্চাতে থাকে বুভুক্ষু ও নৈরাশ্য পীড়িত অগণিত নরনারী l সুস্থবিকাশের জন্মগত অধিকার হারিয়ে তারা ভাবতে শুরু করে এই হৃদয়হীন সমাজে তথা দেশে জন্ম নেওয়াটাই অপরাধ হয়েছে l আসলে এই সমস্যার সুত্রপাত ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের করুন পরিহাস l সৃজনশীল যে কর্মশক্তি নব নব প্রেরণায় মেতে উঠতে পারত, কর্মহীনতার অভিশাপে আজ তা অবক্ষয়ের শোচনীয় পরিনামে ক্লান্ত-অবসন্ন ও দিশেহারা l বেকার সমস্যা আরও নিত্যনতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে ;তাই এই সমস্যা দুরিকৃত করা একান্ত প্রয়োজন l কারন এখানেই লুকিয়ে আছে দেশের শক্তি তথা রাজ্যের শক্তি ও ভবিষ্যৎ যুবসমাজ l

#বেকার সমস্যা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে ব্রিটিশরাজ কতৃক প্রচলিত বহুল পদ্ধতি, যে গুলি একত্রে দায়ী l মুঘল আমলে ভারতের সুখ্যাতির কথা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিলো l এমনকি ভারতের কুটির শিল্পও বিখ্যাত ছিল l কোনও একজন সাহিত্যিক দুঃখের সঙ্গে বলেছেন -যে কোন ভদ্র ঘরের ইংরেজদের জানালার পর্দা থেকে আরম্ভকরে পকেটের রুমাল পর্যন্ত যা কিছু কাপড়ের জিনিস তা সবই ভারতের তৈরী করা l এমনকি বিশ্বের সকল দেশের বাজারে যে রেশমিবস্ত্র বিক্রি হতো,তাও অধিকাংশ আমাদেরদেশ থেকেই আমদানি হতো l ভারতে তাঁতের কাজে নিযুক্ত ছিল হাজার হাজার তাঁতি l যাইহোক ব্রিটিশ অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসে তাঁতের শিল্প বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছিল l তুলোর দাম তিনগুন বৃদ্ধি করে ভারতের কাপড়ের দাম কমিয়ে দিয়ে বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল এই শিল্পকে l মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেদিন তাঁতশিল্প সম্পর্কিত শিল্পীদের ভবিষ্যত l

বেকারত্ব সৃষ্টির দ্বিতীয় কারন হলো তাঁদের শিক্ষাপদ্ধতি l শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক আত্মিক বিকাশসাধন l শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করতে শেখানো l কিন্তু ইংরেজরা ভারতে যে ঔপনিবেশিক শিক্ষা প্রচলিত করেছিলো,তার উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যশাসন ও বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ইংরাজি জানা দেশি কর্মচারি তৈরী করা l

## বর্তমান যুগ প্রতিযোগীতার যুগ l এখন সরকারি চাকুরী হলো অমৃত তুল্য l এখন ডক্টরেট করা যুবক যুবতীরা পর্যন্ত চাকুরীর খোঁজে দিকভ্রান্ত ;এর থেকে কম শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কথা বলার নেই l এর সঙ্গে আবার অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাইভেট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল রকম কর্মীছাটাই l ভালো ভালো ইঞ্জিনিয়াররা পর্যন্ত দিশেহারা l বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শ্রমিক এর স্থানদখল করেছে যন্ত্র l

এমতাবস্তায় বহু শ্রমিককে চাষাবাদের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় l কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশে চাষযোগ্য ভূমির সংকট l তাই বিভিন্ন কারণে শিক্ষিত যুবক যুবতীরা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এবং ইঞ্জিনিয়ারদের করতে হয় মিস্ত্রির কাজ l অবশ্যই স্বীকার করতে হয় বেকারসমস্যার অর্থ হলো দেশের বিপুলসম্ভাবনার অপমৃত্যু l মানবশক্তি সমাজের সম্পদবৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত হতে পারতো কিন্তু এই শক্তির অপব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে l ফলস্বরূপ যুবসমাজের দিকে দিকে বিক্ষোভ এবং বিপ্লবের আগুন ;এবং বিভিন্ন অপরাধ জগতে পদার্পন অথবা আত্মহনন l

### সবশেষে বলতে হয় এই সমস্যা পৃথিবীর সব দেশেই আছে ;কিন্তু ভারতের বেকার সংখ্যা এতোবেশি যে সরকারের একক প্রচেষ্টায় একে রোধ করা সম্ভব নয় l তাই জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গঠন করে দেশের মধ্যে জাগাতে হবে কর্মতৎপরতার শঙ্খরব l সকল সমস্যার সমাধান আছে, বর্তমান যুবকদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে l শুরু করতে হবে স্থানের চাহিদা অনুযায়ী ছোটোখাটো ব্যবসা l খুলতে হবে বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম l এইভাবেই ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘোচাতে হবে আমাদের দেশের তথা রাজ্যের বেকারসমস্যা l